Looking For Anything Specific?

Header Ads

উন্নত দেশে উত্তরণের অভিযাত্রায় ‘রেমিটেন্স যোদ্ধা’


দেশকে উন্নত দেশে উত্তরণের অভিযাত্রায় এগিয়ে রাখতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন রেমিটেন্স প্রেরক প্রবাসী বাংলাদেশীরা। জীবনের গল্প বদলের চেষ্টায় প্রবাসে পা রাখা এসব প্রবাসী শুধু নিজের জন্যই কাজ করে যান না। বিদেশে একেক জন লড়েন রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে। রেমিট্যান্স আয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি উঁকি দেয় মুক্ত অর্থনীতিতে।রেমিটেন্স আমাদের মোট অভ্যন্তরীণ আয় বা জিডিপির ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়নের অন্যতম নিয়ামক এই রেমিটেন্স।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর অন্যতম রেমিট্যান্স খাত স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে এ বছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬২ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর গত জুনের চেয়ে বেড়েছে ৪২ শতাংশ।

বিশ্ব ব্যাংকের ‘কোভিড-১৯ ক্রাইসিস থ্রো মাইগ্রেশন লেন্স’ শীর্ষক হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী করোনাকালীন সময়ে বেশিরভাগ দেশের রেমিটেন্স প্রবাহে ধস নামলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে বাংলাদেশে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৩ শতাংশ। এটা আরও বেড়ে ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের  প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) প্রায় সোয়া ৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে  ৫০ শতাংশ বেশি।

সেপ্টেম্বর মাসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। আর এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত এক মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে বাংলাদেশ।এর আগে এই মহামারীর মধ্যেই গত জুলাই মাসে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।

শুধু তাই নয়, ইতিহাস বলছে এখন থেকে বিশ বছর আগে অর্থাৎ ২০০১-০২ অর্থবছরের পুরো সময়ে (১২ মাসে) রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫০ কোটি ১১ লাখ ডলার। আর করোনাকালে শুধু জুলাই মাসেই প্রবাসীরা ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

দেশের অর্থনীতিতে এমন ভূমিকা রাখলেও এই রেমিটেন্স যোদ্ধারা এয়ারপোর্টে ভোগান্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ইস্যুসহ দূতাবাসগুলোতে অমানবিক আচরণে শিকার হন। মাঝে মধ্যেই খবরের শিরোনাম হচ্ছেন তারা।

এই যেমন, বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েতের স্টাফদের অনৈতিক আচরণে ক্ষুব্ধ কুয়েত প্রবাসীরা। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে দূতাবাসের ভেতরে মসজিদে পানি খেতে গেলে একজন কুয়েত প্রবাসীর কাগজপত্র ও মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কেবল তাই নয়, ধাক্কা দিয়ে দূতাবাস থেকে বের করে দেওয়া ও গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করে কুয়েত দূতাবাসের এক কর্মচারি। তা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় চলেছে তোলপাড়। নিজ দেশের দূতাবাসে এ ধরনের আচরণে হতবাক হয়েছিলেন কুয়েত প্রবাসীরা।

ব্রুনেইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রবাসী কর্মী নির্যাতনের ঘটনার  ভাইরাল হওয়া ভিডিও আমরা দেখেছি। কতটুকু নির্দয় আর অসম্মান করা হলে এমন আচরণ করা হয় একজন প্রবাসী বাংলাদেশির উপর! তাছাড়া সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশেও প্রতিনিয়তই এমন অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। আবার কেউ কেউ শারীরিক নির্যাতনে শিকার হচ্ছেন।

বিভিন্ন দূতাবাসের এমন সাম্প্রদায়িক আচরণ কি শোভা পায়? পরিশেষে বলতে হয় বিদেশে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক পাঠানোর পাশাপাশি দূতাবাসগুলোতে প্রশিক্ষিত সরকারি কর্মচারী পাঠানোর ব্যবস্থা হোক। অন্যথায় ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’কে বাঁচিয়ে রাখাই কঠিন হবে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ