Looking For Anything Specific?

Header Ads

যে ভাবে করবেন মোবাইল ফটোগ্রাফি

ফটোগ্রাফি
ছবি: মোবাইল ফটোগ্রাফি



আজকাল প্রায় সবার হাতে হাতেই স্মার্টফোন দেখা যায় সেই হিসাবে বলা যায় সবাই অন্তত একটি ক্যামেরার মালিক। এসব ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল কোম্পানিগুলোও তাই বিভিন্ন হাই ফাংশনসহ ক্যামেরা অফার করছে। আবার ক্যামেরা কোম্পানীগুলোও বসে নেই, এরাও কমদামে ভাল ভাল কমপ্যাক্ট পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা অফার করছে। তাই বলা যায় এযুগে সবাই ফোটোগ্রাফার! যদিও এদের বড় একটি অংশই ফোটোগ্রাফি নিয়ে কিছু মৌলিক জ্ঞানের অভাবে ভাল ছবি তুলতে পারেন না। কিন্তু সাধারন কিছু নিয়ম মেনে ছবি তোললে আপনার ছবিও সকলের প্রশংসা পেতে পারে।আর ফটোগ্রাফি করার ইচ্ছে তো কম বেশি সবারই রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেই মোবাইল দিয়ে ফটোগ্রাফি করার কিছু টিপস-


লেন্স পরিষ্কার করুন:

স্মার্টফোন সাধারণত  অনেকক্ষণ হাতে, পকেটে বা ব্যাগে থাকে। তাই লেন্সের ওপর তেল-ময়লা জমতে পারে। ছবির ওভারল্যাপিং বন্ধ করতে লেন্স পরিষ্কার করুন। লেন্স পরিষ্কার করার সময় যাতে দাগ না পড়ে, সেদিকে সতর্ক থাকুন। 

আলোকে বন্ধু ভাবুন: 

স্বাভাবিক আলো ছবির জন্য ভালো। কিন্তু অনেক সময় স্বাভাবিক আলো অন্য বস্তুর ওপর ছায়া ফেলে। ছবির অতিরিক্ত আবছাভাব দূর করতে দিনের বেলাতেও ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ক্যামেরায় যদি পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী আলো ঠিকঠাক করে নেওয়ার সুবিধা থাকে, তবে অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্য নিন। এতে আপনার ছবির জন্য প্রয়োজনীয় হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করা সম্ভব হবে।

ফোনের সর্বোচ্চ রেজুলেশন ব্যবহার করুন:

আপনার স্মার্টফোনে যদি ছবির আকার বাড়ানো-কমানোর অপশন থাকে, সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মাপের ছবি তুলুন। সাধারণত ছবি যত বড় হবে, তত বেশি ডিটেইল আপনার ছবিতে ধারণ করতে পারবেন। ছবি রিসাইজের সুবিধা পেতে এবং ঝকঝকে পরিষ্কার ছবি পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ রেজুলেশনের ছবি তোলার বিকল্প নেই।

ছবি তোলার ক্ষেত্রে ফ্রেমিং ব্যবহার করুন:

মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তোলার ক্ষেত্রে হরাইজন্টাল এবং ভার্টিকাল ফ্রেম ব্যবহার করা । হরাইজেন্টাল ফ্রেমে ছবি তুললে দুই পাশের অনেক বেশি বিষয়বস্তু রাখা সম্ভব- আর ভার্টিকাল এর ক্ষেত্রে উপর থেকে নিচে অর্থাৎ লম্বা বিষয়বস্তুর ছবি তোলার ক্ষেত্রে ভালো হবে। কিন্তু ভিডিও করার ক্ষেত্রে হরাইজেন্টাল ফ্রেম ব্যবহার করা উচিত। এতে ভিডিও ধারণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ভিডিও আপলোডের ক্ষেত্রে হরাইজেন্টাল ফ্রেমকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বর্তমানে মোবাইলের ছবি তোলার সুবিধাকে মাথায় রেখে স্কয়ার ফ্রেমেও ছবি তোলা হচ্ছে।


ফোকাস ঠিক রাখা:

লক্ষ্যবস্তুকে ফোকাস করতে চাইলে মোবাইলের স্ক্রিনটি লক্ষ্যবস্তুর দিকে সেট করে শুধু আলতো করে টাচ করতে হবে। তাহলে একটা গোল বা চারকোনা হলুদ রঙের আকৃতি দেখা যাবে। সেইটাই হলো আপনার ফোকাস পয়েন্ট। আপনার ফোকাস পয়েন্ট যার উপরে থাকবে, শুধু সেটাই ফোকাস করা হবে৷ চারপাশের জিনিসগুলোর তুলনায় সেখানকার ব্রাইটনেস ও শার্পনেস থাকবে তুলনামূলকভাবে বেশি।


জুম পরিহার করুন:

মূলত কোনো ছবি কাছ থেকে তুলতে আমরা ক্যামেরা জুম ইন করে থাকি। মোবাইল স্ক্রিনের উপর দুই আঙ্গুল দিয়ে সামনে পেছনে করলে জুম ইন ও জুম আউট সহজেই করা সম্ভব। কিন্তু জুম করার সমস্যাটা হলো এর মাধ্যমে ছবি খুব বাজে ভাবে ফেটে যায় এবং ছবির কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়। কারণ ফোনের জুম সেটিংসটি হলো ডিজিটাল জুম, অপটিক্যাল জুম না। জুম করার ফলে একটি ছবিকে ক্রপ করলে যেমন দেখায়, ঠিক তেমনই দেখাবে৷ তাই কোনো দূরের ছবি তুলতে চাইলে হেঁটে সামনে আগানোটাই শ্রেয়। কিন্তু তাও যদি জুম করে ছবি তোলার ছাড়া কোনো উপায় না থাকে, যেমন: সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থিত কোনো দ্বীপের ছবি তোলার ক্ষেত্রে জুম করেই ছবি তুলতে হবে। কিন্তু জুম করতে যেয়ে ছবির কোয়ালিটি যাতে ভাল হয়, সেইটাও মাথায় রাখা প্রয়োজন।  


নিজের ক্যামেরাটিকে স্থির রাখুন:

এমন অনেক মানুষ আছেন যারা কোনো কিছু স্থির হয়ে ধরে রাখতে পারেন না। তাদের হাত অনবরত কাঁপতে থাকে। আবার যাদের এমন হাত কাঁপে না, তাদের মধ্যে অনেকেই হাতে ক্যামেরা নিয়ে নিজেকে স্থির রাখতে পারেন না। ফলে ছবি তোলার সময় দেখা যায় ছবি ঝাপসা এসেছে। এক্ষেত্রে ট্রাইপড ইউজ করতে পারেন৷ ট্রাইপডের মাধ্যমে আপনার ডিভাইসটি তার মধ্যে সেট করে দিয়ে শুধু ক্লিক করলেই হলো! ব্যস, মনের মতন ছবি পেয়ে যাবেন। এছাড়াই মোবাইলটা কোনো একটা জায়গায় সোজা করে রেখে টাইমার দিয়ে দিলেও কাজ হবে৷ যারা  IOS ইউজার, তারা তাদের ডিভাইসে ইয়ারফোন লাগিয়ে সাউন্ড বাটনে ক্লিক করেও সহজেই ছবি তুলতে পারবেন।


কম্পোজিশন:

ছবির কম্পোজিশন ভালো না হলে ছবিটি দৃষ্টিনন্দন হবে না। আর ছবি সঠিকভাবে কম্পোজ করতে চাইলে সেটিংসে যেয়ে Grid অপশনটি অন করুন। এরপর দেখা যাবে লম্ব বরাবর ২টি এবং আনুভূমিক বরাবর ২টি লাইন তৈরি হয়েছে৷ এবার সেই ২টি লাইন দিয়ে তৈরি ৬টি বক্সগুলোর ভেতরে নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে ছবির বিষয়বস্তু সেট করে নিতে হবে। যেমন: একটা ছবির কোন অংশটা মাঝের বক্সে রাখবো, আকাশের অংশটুকু পুরো উপরের বক্স জুড়েই দিবো, নাকি অর্ধেক দিবো ইত্যাদি। একে Rules of Third বলা হয়।


ভিন্নভাবে ছবি তুলুন:

সবসময় ট্রেন্ডি বা সাধারণ স্টাইলে ছবি না তুলে একটু নিজের মতন করে কিছু তোলার চেষ্টা করুন। সবসময় কেনো চোখের সামনে যা আসছে সেগুলোর ছবি তুলবেন? নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগান। একটু হাঁটু গেড়ে নিচে বসে দেখুননা কত রকম ছবি তোলার বিষয় আপনার পদতলে ঘোরাঘুরি করছে! ছোট ছোট ঘাসফুল, ঘাসফড়িঙয়ের ছবি একটু নতুন আঙ্গিকে তোলার চেষ্টা করুন। মোবাইল ক্যামেরার সুবিধা হলো এই ক্যামেরা এমন এমন জায়গার ছবি তুলতে পারবে, যেখানে বড় ক্যামেরাগুলো পৌছাবে না৷ সেইগুলো আপনার মুঠোফোনে বন্দি করে ফেলুন।


একের অধিক ক্লিক করুন:

কোনো কিছুর একটা ছবি তুলেই তৃপ্তি পাওয়ার কিছু নেই। ছবি তোলার সময় হয়তো আপনার মনে হতে পারে যে ছবিটা সুন্দর হয়েছে। কিন্তু যখন গ্যালারিতে যেয়ে দেখবেন ছবিটা কেমন হয়েছে, তখন আপনার তা ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু তখন আপনি আফসোস ছাড়া আর কিছুই করতে পারবেন না। তাই ছবি তোলার সময় একসাথে অনেকগুলো ছবি তুলে ফেলুন। যেসব ছবি ভালো আসবে না, সেগুলো ডিলিট করে দিলেই হবে।

অতিরিক্ত এডিটিং এড়িয়ে চলুন:

আজকাল এমন এক শ্রেণির মানুষের দেখা মিলে, যারা যেকোনো সাধারণ ছবিতেও অতিরিক্ত HDR ইফেক্ট ব্যবহার করে। HDR ইফেক্ট ব্যবহারের ফলে ছবির শার্পনেস তো নষ্ট হবেই, এর পাশাপাশি ছবির কোয়ালিটিও বাজে হবে। তাই  HDR ইফেক্ট যদি ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে Snapseed এর  HDR ইফেক্টটা ব্যবহার করা উচিত।


বিভিন্ন কোণ থেকে ছবি তুলতে চেষ্টা করুন:

সবসময় একই এঙ্গেল যেমন সামনে থেকে সোজাসুজি ছবি না তুলে ফোনটা একটু বাঁকা করে ছবি তোলার চেষ্টা করুন। এতে ছবিতে নতুনত্ব আসবে। আমরা যদি ইন্সটাগ্রাম ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবিগুলো দেখে থাকি, তাহলে বোঝা যাবে যে শুধুমাত্র ছবি তোলার এঙ্গেল চেঞ্জ করেই তারা তাদের স্টাইলে ভিন্নতা আনেন।


 সদা প্রস্তুত থাকুন:

হাতের কাছে ফোনটা না থাকলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি তোলার বিষয় আপনার হাত থেকে ফসকে যাবে। তখন মনে হবে, “ইশ! ফোনটা যদি হাতের কাছে রাখতাম। বিশেষ করে আপনি যখন কোথাও বেড়াতে যাবেন, যেমন: পাহাড়ে, সমুদ্রে যেকোনো জায়গায়, তখন ফোনের ক্যামেরা সবসময় অন রেখে দেবেন। চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে সাথে দুইটা পাওয়ার ব্যাংকও নিয়ে রাখবেন। যাতে করে কোনো মূহুর্ত যেন আপনি মিস না করে ফেলেন।  


ফ্ল্যাশ এড়িয়ে চলুন:

মূলত ছবিতে আলোর অনুপস্থিতিতে আমরা ফ্ল্যাশ ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু ফ্ল্যাশ ইউজ করলে ছবির মান খারাপ হয়ে যায়, বিশেষ করে দিনের বেলায় ফ্ল্যাশ ইউজ করলে। তাই পর্যাপ্ত আলো থাকাকালীন আমরা ফ্ল্যাশ ইউজ করবো না।


অতিরিক্ত খালি জায়গা নিয়ে কাজ করুন:

ছবি তোলার সময়  অতিরিক্ত খালি জায়গা নিয়ে কাজ করুন। ধরুন আপনি এখন একটা মাঠে দাঁড়িয়ে আছেন। ছবি তোলার সময় আপনাকে মাঝখানে না রেখে ফ্রেমের এক পাশে রাখা হলো এবং বাকি অংশটা জুড়ে শুধু মাঠকেই প্রাধান্য দেওয়া হলো৷ অর্থ্যাৎ এখানে নেগেটিভ স্পেস ব্যবহার করে ছবি তোলা হয়েছে। আজকাল নেগেটিভ স্পেস ব্যবহার করেও খুব সুন্দর সুন্দর ছবি তোলা যাচ্ছে।


লিডিং লাইনি ব্যবহার করুন:

লিডিং লাইনি বলতে এমন এক ধরণের লাইন বোঝানো হচ্ছে, যা সরাসরি সকলের চোখে পড়বে। যেমন: উপর থেকে তোলা সিড়ির ছবি, রেল লাইনের ছবি, পাহাড়ি রাস্তার ছবি ইত্যাদি।


ছবির এক অংশ রঙিন:

মনে করুন আপনি একটা ছবি তুললেন। যার সম্পূর্ণ অংশ সাদাকালো কিন্তু শুধু একটা জায়গায় লাল। ধরা যাক, আপনি হলুদ রঙের একটা শাড়ি পরেছেন, সাথে লাল টিপ। একটু এডিট করে আপনার পুরো ছবিটা আপনি সাদাকালো করে ফেললেন, শুধুমাত্র আপনার কপালের টিপটা লাল। আপনার মনে হয় না এমনটা করলে ছবিটা অনেক নান্দনিক হয়ে উঠবে? চাইলেই এমন নানাভাবে এডিট করে আপনি আপনার এডিটিং স্কিলটাও যাচাই করে নিতে পারবেন।


 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ